ত্রেতা যুগে অযোধ্যার রাজা দশরথের পুত্র, রামায়নের অন্যতম প্রধান চরিত্র রাম বাবার ইচ্ছায় ১৪ বছরের জন্য বনবাসে যান।
সাথে ছিলেন পত্নী সীতা আর ভাই লক্ষন। বছর দশেক এদিক সেদিক ঘুরে এক বনে আসলেন, বনের নাম পন্চবটি। বনটি সীতার খুব পছন্দ হওয়াতে তারা আপাতত সেখানেই থাকতে সিদ্ধান্ত নিল।
ভালই দিন কাটছলি তাদের। হঠাৎ ঘুরতে ঘুরতে সেখানে এলেন লংকা অধিপতি মহাবীর রাবনের বোন শুর্পনখা। জংগলের মধ্যে সুদর্শন রামকে দেখে তিনি মুগ্ধ হয়ে তার প্রেমেই পড়ে গেলেন আর তাকে বিয়ে করতে বললেন।
রাম তাকে বুঝিয়ে বললেন যে তিনি বিবাহিত আর তার দ্বিতীয় বিয়ে করার কোন ইচ্ছাই নেই্। কিন্তু শুর্পনখা তাতে প্রবোধ মানলেননা। তখন রাম পাশে ভাই লক্ষনকে দেখিয়ে বললেন 'তাহলে তুমি তাকে বিয়ে কর' কিন্তু লক্ষনও রাজি হলেননা। এতে শুর্পনখা রেগে মেগে সীতাকেই আক্রমন করলেন। তখন লক্ষন তার নাক কেটে তাকে লংকায় পাঠিয়ে দিলেন। শুর্পনখা তখন তার ভাই 'খর' আর ১২০০০ সৈন্য পাঠাল রামকে শায়েস্তা করার জন্য। কিন্তু দুই ভাই রাম আর লক্ষনের হাতে তারা সবাই নিহত হল।
অবশেষে শুর্পনখা তার ভাই লংকার রাজা বিশ্রবা মুনির পুত্র রাবনের কাছে গিয়ে বলল সীতার অসাধারণ রুপের কথা আর বলল তাকে বিয়ে করার কথা।
এই শুর্পনখাই কিন্তু রামায়নের মূল হোতা, সে না থাকলে রামায়নই হতনা বলে অনেক বিশেষজ্ঞ বলেন।
যাহোক রাবন অসাধারণ বুদ্ধিমান আর অনেক বড় বীর ছিলেন। তিনি অবশ্য রাম লক্ষনের বীরত্ব সম্পর্কে ভালই জানতেন। তাই রণ কৌশল হিসেবে তিনি তার ভাই মারীচকে বললেন মায়া হরিণের ছদ্মবেশে গিয়ে রাম লক্ষনকে ভুলিয়ে দুরে নিয়ে যেতে, যাতে সীতাকে হরণ করা যায়।
মারীচ পন্ডিত ছিলেন। তিনি রাবনকে সদুপেশই দিলেন আর বললেন এসব না করার জন্য, তাতে ক্ষতি হতে পারে। কিন্তু কে শোনে কার কথা, রাবন মারীচকে হরিনের বেশে পাঠিয়ে নিজে গেলেন ভিক্ষুকের ছদ্মবেশে রামের এলাকায়।
এদিকে মায়া হরিন বেশে মারীচকে দেখে সীতা বলল তার ঐ হরিন চাই। রাম গেলেন ঐ হরিন ধরতে আর ভাই লক্ষনকে রেখে গেলেন সীতার পাহারায়।
এদিকে মায়া হরিন বেশে মারীচকে দেখে সীতা বলল তার ঐ হরিন চাই। রাম গেলেন ঐ হরিন ধরতে আর ভাই লক্ষনকে রেখে গেলেন সীতার পাহারায়।
রাম হরিনকে তীর ছুড়লেন, হরিন বেশে মারীচ মারা যাবার আগে 'হা লক্ষন' বলে চিৎকার করল। ওদিকে সীতা এই শব্দ পেয়ে লক্ষনকে বলল রামের সাহায্যে যাবার জন্য। লক্ষন সীতাকে অরক্ষিত রেখে যেতে রাজি হলনা তবে সীতার বারবার অনুরোধের পর তার কুটিরের বাইরে একটা রেখা টেনে বলল এই 'লক্ষনরেখা'র বাইরে না যেতে।
এই সুযোগে রাবন এসে সীতার ভিক্ষা চাইবার ছল করে সীতার কুটিরে আসে। সীতা লক্ষনরেখার বাইরে না আসতে চাইলে ভিক্ষুকরুপী রাবন রেগে যায়, তখন সীতা বাধ্য হয়ে লক্ষনরেখা পার হয়ে বাইরে এলেই রাবন তাকে নিয়ে লংকায় রওয়ানা দেয়।
পথিমধ্যে রামের বাবা দশরথের বন্ধু গরুরের পুত্র জটায়ু নামক বিশাল পাখি রাবনের সীতা হরণের চেস্টা দেখে বাধা দেয়। তবে যুদ্ধে হেরে গিয়ে সে আহত হয়। রাবন সীতাকে নিয়ে লংকায় চলে যান।
পথিমধ্যে রামের বাবা দশরথের বন্ধু গরুরের পুত্র জটায়ু নামক বিশাল পাখি রাবনের সীতা হরণের চেস্টা দেখে বাধা দেয়। তবে যুদ্ধে হেরে গিয়ে সে আহত হয়। রাবন সীতাকে নিয়ে লংকায় চলে যান।
এভাবেই রাবন সীতাকে হরণ করেন আর এক মহা সংগ্রামের সুত্রপাত হয়, সৃস্টি হয় রামায়নের।
তাকে উদ্ধার করতে রাম, লক্ষণ , হনুমান সহ বিশাল বাহিনী লংকা আক্রমণ ও ধ্বংস করে। সীতাকে উদ্ধার করে নিয়ে এলেও পরবর্তীতে রামচন্দ্রের অযোধ্যা রাজ্যের প্রজারা সীতার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলে। সীতার চরিত্রের পবিত্রতা প্রমাণের জন্য রাম অগ্নিপরীক্ষার আয়োজন করেন। অগ্নিপরীক্ষার অংশ হিসাবে সীতাকে অগ্নিকুণ্ডে প্রবেশ করতে হয়। সীতা সতীসাধ্বী হলে আগুন তার কোনো ক্ষতি করবে না, এই ছিলো সবার বিশ্বাস। অগ্নি রীক্ষার মাধ্যমে সীতার চরিত্রের পবিত্রতা প্রমাণ হলে রামচন্দ্র সীতাকে ঘরে ফিরিয়ে নেন।
কিন্তু পরবর্তীতে আবারও সীতার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তখন রাম সীতাকে আবারও বনবাসে পাঠান। সেখানে বাল্মিকী মুণির আশ্রমে সীতা আশ্রয় পান।
এর কিছুদিন পরেই সী্তার দুই পুত্র সন্তান - লব ও কুশের জন্ম হয়। এই দুই পুত্র সন্তান বড় হওবার পরে রাম একবার শিকার করতে বনে গেলে রামের সাথে পুত্রদের পুনর্মিলন হয়।
কিন্তু সীতার চরিত্র নিয়ে আবারও প্রজাদের নিন্দা শুরু হলে লজ্জ্বা ও ক্ষোভে সীতা পাতালে প্রবেশ করেন।
রাবনের সীতা অপহরণ- রামায়ন
Reviewed by Apon
on
August 01, 2017
Rating: