তৃতীয় পাণ্ডব ভীম

পাণ্ডুর অনুমতিক্রমে তাঁর
স্ত্রী কুন্তী
পবনদেবের
আশীর্বাদে ভীমের জন্ম হয়।
ইনি ছিলেন কুন্তীর তৃতীয় পুত্র
এবং
পাণ্ডুর দ্বিতীয় ক্ষেত্রজ
পুত্র।
ইনি দৈহিক
আকৃতিতে ছিলেন বিশাল
এবং শক্তি ছিল অপরিমিত।
এঁর কোন
দাড়ি না থাকায় কর্ণ
এঁকে মাকুন্দ বলে
পরিহাস করতেন। এর গায়ের
রং ছিল
কাঁচা সোনার মত।
ইনি ছিলেন
বিশাল কাঁধের অধিকারী,
উন্নতবক্ষ ও
অযুত হাতীর শক্তির সমান
বলশালী। ইনি
অতিরিক্ত ভোজনপটু ছিলেন
বলে,
বৃকোদর নামপ্রাপ্ত হন।
বাকী চার
পাণ্ডব এবং ধৃতরাষ্ট্রের
পুত্রদের সাথে
দ্রোণাচার্যের
কাছে ইনি অস্ত্র
শিক্ষা করেন। এরপর
ইনি বলরামের
কাছে বিশেষভাবে গদাযুদ্ধ
শেখেন।
ফলে ইনি অবিলম্বে গদা যুদ্ধে শ্রেষ্ঠত্ব
অর্জন করেন। ছোটবেলায়
শারীরীক
শক্তির কারণে কৌরবদের
একশত ভাইকে
সবসময় নিপীড়িত করতেন।
বিপদের সময়
দ্রৌপদী এবং ভীম এঁর উপরই
সবচেয়ে
বেশী নির্ভর করতেন।
শৈশবে দুর্যোধন
তাঁকে হত্যা করার
জন্য প্রমাণকোটি নামক
স্থানে একটি
জলক্রীড়ার জন্য স্থান
নির্বাচন করেন।
পরে সকলকে ডেকে উক্ত
স্থানে
জলক্রীড়া করার সময় বিষ
মিশ্রিত পিঠা
খাওয়ান
এবং লতা দিয়ে হাত পা
বেঁধে নদীতে ফেলে দেন। এই
অবস্থায়
ইনি নাগলোকে পৌঁছুলে,
নাগদের
দংশনে তাঁর শরীরস্থ বিষের
ক্ষয় হয়।
জ্ঞান লাভ করে ইনি নাগদের
হত্যা
করতে থাকেন। পরে নাগরাজ
তাঁকে
নিজের দৌহিত্র
কুন্তীভোজের
দৌহিত্র
বলে চিনতে পেরে ভীমকে
আলিঙ্গন করেন এবং রসায়ন
পান করান।
ইনি মোট আটটি রসায়ন-কুণ্ডু
পান করে
আট দিন ঘুমিয়ে কাটান।
আটদিন ধরে
ইনি রসায়ন হজম করে অযুত
হাতির বল লাভ
করেন। পরে নাগদের
সহায়তায় ইনি ঘরে
ফিরে আসেন।
দুর্যোধন জুতগৃহে অন্যান্য
পাণ্ডবদের
সাথে এঁকেও পুড়িয়ে মারার
উদ্যোগ
নেন। পরে বিদুরের সহায়তায়
অন্যান্যদের সাথে ইনিও
রক্ষা পান।
ভীম সুরঙ্গপথে সকলকে অন্যত্র
পাঠিয়ে
নিজেই
জতুগৃহে অগ্নিসংযোগ করে
সকলকে সাথে নিয়ে গঙ্গাতীরে
উপস্থিত হন এবং সেখান
থেকে বিদুরের
প্রেরিত নৌকায়
করে গঙ্গা পার হয়ে
জঙ্গলে প্রবেশ করেন। দেখুন :
জতুগৃহ
এখানে সকলে ক্লান্ত
হয়ে ঘুমিয়ে
পড়লে ভীম
একা সকলকে পাহারা দেন।
এই বনে হিড়িম্ব নামক এক
রাক্ষস বাস
করতো। হিড়িম্ব এদের মাংস
খাওয়ার
জন্য তাঁর বোন
হিড়িম্বাকে পাঠায়।
কিন্তু হিড়িম্বা ভীমের
সৌন্দর্যে মুগ্ধ
হয়ে সুন্দরী নারীরূপ
ধরে ভীমের
সামনে আসেন
এবং হিড়িম্বের
অভিসন্ধির কথা বলে দেন।
ইনি ভীমের
কাছে বিবাহের প্রস্তাব
দেন।
বোনের বিলম্ব
দেখে হিড়িম্ব নিজে
এলে, ভীম তাঁকে হত্যা করেন
এবং
হিড়িম্বাকে বিবাহ করেন।
এরপর
পাণ্ডবেরা একচক্রা নামক
নগরে
এসে এক ব্রাহ্মণের
ঘরে আশ্রয় নেন। এই
নগরীতে বক নামক রাক্ষস
প্রতিদিন
নগরীর একজন করে মানুষ ভক্ষণ
করতো।
পাণ্ডবরা যেদিন ব্রাহ্মণের
ঘরে আশ্রয়
নেন, সেদিনই উক্ত ব্রাহ্মণ
রাক্ষসের
খাবার হিসাবে নির্বাচিত
হয়েছিলেন। কুন্তী উক্ত
ব্রাহ্মণের
পরিবর্তে রাক্ষসের
কাছে ভীমকে
পাঠান। ভীম উক্ত
রাক্ষসকে হত্যা করে
একচক্রাবাসীদেরক
ে রাক্ষসদের হাত
থেকে রক্ষা করেন।
এই নগরীতে থাকাকালীন
সময়ে
পাণ্ডবরা দ্রৌপদীর
স্বয়ংবর-সভার কথা
জানতে পারেন। উক্ত সভায়
অর্জুন
লক্ষ্যভেদ
করে দ্রৌপদীকে লাভ
করলে- সভায় আহুত
অন্যান্যরা পাণ্ডবদের
আক্রমণ করে। এই যুদ্ধে মূল
কৃতিত্ব দেখান
অর্জুন ও ভীম।
পাণ্ডবরা যুদ্ধে সকলকে
পরাজিত
করে দ্রৌপদীকে সাথে
নিয়ে কুন্তী'র কাছে আসেন।
দ্রৌপদীকে নিয়ে পঞ্চপাণ্ডব
যখন ঘরে
ফেরেন, তখন কুন্তী ঘরের
মধ্যে ছিলেন।
পঞ্চপাণ্ডব তাঁদের
মাকে উদ্দেশ্য করে
বলেন যে, তাঁরা একটি অপূর্ব
সামগ্রী
ভিক্ষা করে এনেছেন।
কুন্তী না দেখেই
বলেন,-
তোমরা সকলে মিলে সেই
জিনিস ভোগ কর। এরপর
দ্রৌপদীকে
দেখে ইনি বিব্রত হয়ে পড়েন।
পরে
ব্যাসদেবের বিধান মতে-
পঞ্চপাণ্ডবের
সাথে দ্রৌপদী বিবাহ
করেন।
এরপর
পাণ্ডবেরা ইন্দ্রপ্রস্থে রাজধানী
স্থাপন করে রাজত্ব শুরু করলে,
যুধিষ্ঠির
রাজা হন। নারদের
পরামর্শে যুধিষ্ঠির
রাজসূয় যজ্ঞের আয়োজন
করেন। মগধরাজ
জরাসন্ধ এই যজ্ঞের বিঘ্ন
সৃষ্টি করবেন
জেনে কৃষ্ণ ভীম ও
অর্জুনকে সাথে
নিয়ে মগধ রাজ্যে উপস্থিত
হন। কৃষ্ণ, ভীম
ও অর্জুন স্নাতক
ব্রাহ্মণবেশে জরাসন্ধের
সম্মূখে আসেন। জরাসন্ধ এই
তিনজনের
হাতে অস্ত্রব্যবহারের চিহ্ন
দেখে প্রকৃত
পরিচয় জানতে ইচ্ছা করলে,
কৃষ্ণ তাঁদের
প্রকৃত পরিচয় দেন। এরপর
জরাসন্ধের সাথে
ভীমের মল্লযুদ্ধ হয়। ভীম
একাধিকবার
জরাসন্ধকে পরাজিত
করে শরীর বিছিন্ন
করেন, কিন্তু অল্প কিছুক্ষণের
মধ্যে
উক্তশরীর
জোড়া লেগে জরাসন্ধ
জীবিত হয়ে উঠতে থাকেন।
এরপর কৃষ্ণের
ইশারায় ভীম বিচ্ছিন্ন
হওয়া দেহকে
মিলিত হওয়ায়
বাধা সৃষ্টি করলে-
জরাসন্ধের প্রকৃত মৃত্যু ঘটে।
রাজসূয়
যজ্ঞের অর্থ আহরণের জন্য
পাণ্ডবরা
দিগ্বিজয়ে বের হলে ভীম পূব
দিকে
যাত্রা করেন। এই যাত্রায়
ইনি
পাঞ্চাল, বিদেহ, দশার্ণ,
চেদি,
কোশল,
অযোধ্যা প্রভৃতি দেশ জয়
করে
ইন্দ্রপ্রস্থে ফিরে আসেন।
হস্তিনাপুরে দুর্যোধনের
দ্যুতসভায়
শকুনির কাছে যুধিষ্ঠির
পরাজিত হলে-
সভামধ্যে দুঃশাসন
দ্রৌপদীকে
অপমান করলে, ভীম
দুঃশাসনের বক্ষরক্ত
পান করার প্রতিজ্ঞা করেন।
সভামধ্যে
দ্রৌপদীকে অপমান করার
জন্য
দুর্যোধন বাম উরু প্রদর্শন
করলে, ভীম
দুর্যোধনের উরুভঙ্গের
প্রতিজ্ঞা করেন।
বনযাত্রাকালে ইনি দুর্যোধনের
রক্তপান ও কৌরবভ্রাতাদের
হত্যা
করবেন
বলে প্রতিজ্ঞা করেন।
কাম্যকবনে বসবাসকালে বকরাক্ষসের
ভাই কির্মীর প্রতিশোধ
গ্রহণের
উদ্দেশ্যে পাণ্ডবদের আক্রমণ
করলে, ভীম
তাকেও হত্যা করেন।
দ্বৈতবনে
বসবাসকালে ভীম কপটতার
দ্বারা
যুদ্ধজয়ের পরামর্শ
দিতে গেলে-
যুধিষ্ঠিরের যুক্তির
কাছে ইনি
পরাজিত হন। বদরিকাশ্রমের
কাছে
বসবাসকালে, গঙ্গায়
সুগন্ধী পদ্মফুল
ভেসে যেতে দেখে দ্রৌপদী উক্ত
পদ্মসংগ্রহের জন্য
ভীমকে অনুরোধ
করেন। ভীম উক্ত পদ্ম সংগ্রহের
জন্য অগ্রসর
হয়ে গন্ধমাদন পর্বতে উপস্থিত
হন।
সেখানে তাঁর অগ্রজ
হনুমানের সাথে
দেখা হয়। পদ্ম সংগ্রহের জন্য
ভুল করে
মানুষের অগম্য স্বর্গপথে ভীম
রওনা
দিলে, হনুমান রুগ্ন বানরের
বেশে তাঁর
পথরোধ করে বসেন। ভীম
হনুমানকে পথ
ছেড়ে দিতে বললে, হনুমান
তাতে
রাজী হলেন না। ভীম তাঁর
অগ্রজকে
চিনতে না পেরে আস্ফালন
করতে
থাকলে, হনুমান তাঁর লেজ
বিছিয়ে
দিয়ে বললেন, তুমি এই লেজ
সরিয়ে
তোমার গন্তব্যে যাও। এরপর
ভীম বহু
চেষ্টা করেও উক্ত লেজ
সরাতে অক্ষম
হলে, হনুমান তাঁর পরিচয় দেন।
এরপর ভীম
তাঁর অগ্রজের
কাছে ক্ষমা প্রার্থনা
করে, সমুদ্র লঙ্ঘনের
পূর্বে হনুমানের রূপ
কেমন ছিল তা দেখার জন্য
আবেদন
জানান। এই সময় হনুমান তাঁর
বিন্ধ্যপর্বতের
মতো বিশাল রূপ দেখান।
এরপর হনুমান
পদ্মবনের প্রকৃত পথ দেখান।
উল্লেখ্য
কুরুক্ষেত্রের
যুদ্ধে ইনি আড়ালে থেকে
ভীমকে সাহায্য করেছিলেন।
এরপর
হনুমানের দেখানো পথ
ধরে ইনি কুবের
ভবনের নিকটস্থ একটি জলাশয়
থেকে
কুবেরের অনুচরদের পরাজিত
করে উক্ত
পদ্ম সংগ্রহ করেন।
জটাসুর নামক এক রাক্ষস
পাণ্ডবদের
সাথে ব্রাহ্মণের
ছদ্মবেশে বাস করতেন।
একদিন ভীম মৃগয়ায় গেলে, এই
রাক্ষস
যুধিষ্ঠির, নকুল, সহদেব ও
দ্রৌপদীকে
অপহরণ করে। ভীম
ফিরে এসে প্রকৃত বিষয়
অবগত হয়ে এই
অসুরকে হত্যা করেন। অর্জুন
স্বর্গে অস্ত্রশিক্ষার জন্য
গেলে, তাঁর
ফিরে আসার প্রতীক্ষায়
কৈলাসপর্বতের
কাছে পাণ্ডবরা যখন
প্রতীক্ষা করছিলেন, তখন
দ্রৌপদীর
প্ররোচনায় ভীম কুবেরের
অনুচর
রাক্ষসদেরকে সেখান থেকে
বিতারিত করেন। এই সময়
কুবেরের বন্ধু
মণিমান ভীমের হাতে নিহত
হন।
বনবাসের একাদশ
বত্সরে যমুনার
উত্পত্তিস্থানের নিকটস্থ
বিশাখযূপ বনে
পাণ্ডবেরা বসবাসকালে একদিন
ভীম
মৃগয়ায় বের হন।
সেখানে অগস্ত্য-শাপে
অজগররূপী নহুষ ভীমকে বেষ্ঠন
করে ভক্ষণ
করতে উদ্যত হন। যুধিষ্ঠির
বিভিন্ন দুর্লক্ষণ
দেখে ভীমের খোঁজে বের
হয়ে,
অজগররূপী নহুষের
কাছে উপস্থিত হন।
যুধিষ্ঠির নহুষের
কাছে ভীমের মুক্তি
দাবী করলে, নহুষ যুধিষ্ঠিরের
কাছে
কিছু প্রশ্নের উত্তর
দাবী করে বলেন যে,
প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিলেই
ভীমকে
মুক্তি দেবেন। এরপর যুধিষ্ঠির
নহুষের
প্রশ্নের যথাযথ উত্তর
দিয়ে ভীমকে
উদ্ধার করেন।
কাম্যকবনে পাণ্ডবরা ফিরে এসে বসবাস
করা কালে পাণ্ডবদের
অনুপস্থিতে
জয়দ্রথ দ্রৌপদীকে হরণ
করেন। পাণ্ডবরা
জয়দ্রথকে ধরে এনে লাঞ্ছিত
করতে
থাকলে যুধিষ্ঠির
তাঁকে রক্ষা করেন।
কিন্তু ভীম তাঁর মাথায়
অর্ধাস্ত্র
বাণদ্বারা পঞ্চচূড়া তৈরি করে
পাণ্ডবদের
দাসরূপে বেড়াতে আদেশ
করেন। এরপরও যুধিষ্ঠির
তাঁকে মুক্তি
দেন।
পাণ্ডবদের
অজ্ঞাতবাসকালে ভীম বল্লভ
নামে বিরাটের রন্ধনশালার
অধ্যক্ষ হন।
এখানে থাকা অবস্থায়
ব্রহ্মার
উদ্দেশ্যে আয়োজিত
উত্সবে জীমূত
নামক মহামল্ল ও অন্যান্য বহু
মল্লযোদ্ধাকে মল্লযুদ্ধে পরাজিত
করেন। বিরাটের শ্যালক
দ্রৌপদীকে
ভোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ
হয়ে
সভামধ্যে অপমান করলে,
দ্রৌপদী
ভীমকে বিষয়টি জানান।
পরে ভীমের
পরামর্শে দ্রৌপদী কীচককে
রাত্রিবেলায় নাট্যশালায়
আমন্ত্রণ
জানান। কীচক
দ্রৌপদীকে পাবার
জন্য রাত্রিবেলায়
নাট্যশালায় এলে
ভীমের হাতে নিহত হন।
কীচকের মৃতদেহ
শ্মশানে নিয়ে যাবার সময়
কীচকের
ভাইয়েরা দ্রৌপদীকেও
বন্দী করে
শ্মশানে নিয়ে যান। ভীম
ছদ্মবেশে
তাঁদের
সাথে গিয়ে সকলকে হত্যা করে
দ্রৌপদীকে উদ্ধার করেন।
এরপর সুশর্মা
দুর্যোধনের সহায়তায়
বিরাটরাজকে
পরাজিত ও বন্দী করে তাঁর
সকল গবাদি
পশু হরণ করেন।
পরে যুধিষ্ঠিরের আদেশে
ভীম সুশর্মাকে পরাজিত ও
বন্দী করে
বিরাটরাজকে উদ্ধার করেন।
অবশ্য এই
যুদ্ধে মূখ্য
ভূমিকা রেখেছিলেন অর্জুন।
দেখুন : অর্জুন
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে ভীম
একা ধৃতরাষ্ট্রের
একশত
পুত্রকে হত্যা করেছিলেন।
পাণ্ডবরা ভীমকে সামনে রেখে যুদ্ধ
শুরু
করেন। ইনি প্রথম ও দ্বিতীয়
দিনে
ভীষ্মের সাথে যুদ্ধ করেন।
দ্বিতীয়
দিনে ইনি ক্রমান্বয়ে শক্রদেব,
ভানুমান,
শ্রুতায়ু, সত্য, সত্যদেব,
কেতুমানসহ বহু
কৌরব সৈন্যকে হত্যা করেন।
চতুর্দশ ও
পঞ্চম দিনে দ্রোণাচার্যের
সাথে
বীরত্বব্যঞ্জক যুদ্ধ করেন।
যুদ্ধের সপ্তদশ
দিনে ইনি দুঃশাসনকে হত্যা করে
প্রতিজ্ঞা স্বরূপ তার বক্ষ
চিরে রক্তপান
করেন। এই দিনেই ইনি কর্ণের
কাছে
পরাজিত হন। কিন্তু কর্ণ
কুন্তীর কাছে
প্রতিজ্ঞা করেছিলেন
যে অর্জুন ছাড়া
অন্য কোন
পাণ্ডবকে হত্যা করবেন না।
সেই
কারণে ইনি ভীমকে মুক্তি দেন।
যুদ্ধের অষ্টাদশ
দিনে দুর্যোধনের সকল
সৈন্য নিহত হলে- দুর্যোধন
পালিয়ে
দ্বৈপায়ন হ্রদে যান।
মায়া দ্বারা
জলের স্তম্ভ
তৈরি করে সেখানে
লুকিয়ে থাকেন। এই সময়
দুর্যোধনের
পক্ষের তিন সেনাপ্রধান
অশ্বত্থামা,
কৃপাচার্য ও কৃতবর্মা যুদ্ধের
পরামর্শ করতে
এলে- তিনি পরদিনের জন্য এই
আলোচনা স্থগিত
রাখতে বলেন। এই
আলোচনা কয়েকজন
শিকারী শুনে
পাণ্ডবদের
কাছে এসে দুর্যোধনের
অবস্থানের কথা জানান।
পাণ্ডবরা
সেখানে এলে, ভীমের
সাথে যুদ্ধে
অবতীর্ণ হন। উল্লেখ্য
ইনি ভীমকে হত্যা
করার জন্য তের বত্সর এক
লৌহ মূর্তির উপর
গদা প্রহার অভ্যাস
করেছিলেন। সরস্বতী
নদীর দক্ষিণ প্রান্তে উভয়ের
মধ্যে যুদ্ধ শুরু
হয়। গদা যুদ্ধে ভীম অত্যন্ত
বলশালী হলেও
দুর্যোধন অত্যন্ত
কৌশলী ছিলেন।
কৃষ্ণের ইঙ্গিতে ভীম
অন্যায়ভাবে
দুর্যোধনের উরুতে আঘাত
করে তা
ভেঙে দেন। উল্লেখ্য
গদা যুদ্ধে কটি
দেশের নিম্নে আঘাত
করা অন্যায় বলে
বিবেচিত হত। উরু ভঙ্গের পর
ভীম
দুর্যোধনের মস্তক বাম
পা দ্বারা
নিস্পিষ্ট করেন। এই অন্যায়
যুদ্ধ দেখে
উপস্থিত বলরাম
ভীমকে হত্যা করতে
অগ্রসর হলে, কৃষ্ণ তাঁকে শান্ত
করেন।
দুর্যোধন এই অন্যায় যুদ্ধের
জন্য কৃষ্ণকে
তিরস্কার করেন।
পাণ্ডবেরা মৃতপ্রায়
দুর্যোধনকে
পরিত্যাগ করে চলে গেলে,
সেখানে
কৃপাচার্য, কৃতবর্মা ও
অশ্বত্থামা আসেন।
এরপর দুর্যোধন
অশ্বত্থামাকে
সেনাপতি হিসাবে নিয়োগ
করেন
এবং ভীমের ছিন্নমুণ্ডু আনার
নির্দেশ
দেন। এই
অশ্বত্থামা বাকি দুজনকে দ্বার
রক্ষায় রেখে পাণ্ডব
শিবিরে প্রবেশ
করে ঘুমন্ত সকলকেই
হত্যা করেন। এই সময়
পঞ্চপাণ্ডব কৃষ্ণ ও
সাত্যকি অনত্র্য থাকায়
তাঁরা রক্ষা পান।
অশ্বত্থামা
দুর্যোধনকে এই সংবাদ
প্রেরণ করলে
আনন্দ চিত্তে প্রাণত্যাগ
করেন। এই
হত্যাকাণ্ডে অন্যান্য
পাণ্ডববীরদের
সাথে দ্রৌপদীর সকল সন্তান
মৃত্যুবরণ
করে। এই কারণে দ্রৌপদী
অশ্বত্থামাকে হত্যা করে তার
মাথার
মণি এনে দেওয়ার জন্য
ভীমকে অনুরোধ
করেন। অর্জুন ও কৃষ্ণ
অশ্বত্থামাকে
পরাজিত করলে, ভীম
অশ্বত্থামার
মাথার
মণি এনে দ্রৌপদীকে দেন।
যুদ্ধ
শেষে যুধিষ্ঠির
ভীমকে যৌবরাজ্যে
অভিষিক্ত করেন।
ভীম
গোপনে ধৃতরাষ্ট্রকে অপমান
করলে, ধৃতরাষ্ট্র বনবাসী হন।
ময়দানব বিন্দু
সরোবর
থেকে বৃষপর্বা গদা এনে
ভীমকে উপহার দিয়েছিলেন।
মহাপ্রস্থানের
পথে দ্রৌপদী, সহদেব,
নকুল, ও অর্জুনের পরে এর পতন
ঘটে।
অতিভোজন ও আত্ম-
প্রশংসার কারণে
এঁর পতন ঘটেছিল।
তৃতীয় পাণ্ডব ভীম তৃতীয় পাণ্ডব ভীম Reviewed by Apon on August 01, 2017 Rating: 5
Powered by Blogger.